কম্পিউটার ভাইরাস কি‍‌ কি ক্ষতি করে


কম্পিউটার ভাইরাস বিশ্বে  একটি অপ্রীতিকর ও বিরস শব্দ যা বাইরে উৎস থেকে কম্পিউটারে মেমোরিতে প্রবেশ করে গোপনে বিস্তার লাভ করে মূল্যবান প্রোগ্রাম তথ্য নষ্ট করা ছাড়াও অনেক সময় কম্পিউটারকে অচল করে দেই।কম্পিউটারের ভাষায় ভাইরাস (VIRUS) শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় "ভাইটাল ইনফরমেশন রিসোর্সেস আন্ডার সিজ" (VIRUS) এর পূর্ণরূপ (Vital Information Resources Under Seize) কম্পিউটার ভাইরাস একটি ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম।কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন কতগুলো অবৈধ নির্দেশের সেট বা প্রোগ্রাম যা সুন্দর জিনিস কে ধ্বংসকারী  হিসেবে নিজেকে অন্যান্য প্রোগ্রামের সাথে সংক্রম ঘটায় এবং পর্যায়ক্রমে নিজে নিজেই বিস্তার লাভ করে। কম্পিউটার ভাইরাস প্রকারান্তের এ সংক্রমিত প্রোগ্রামগুলো অন্যান্য অসংক্রমিত প্রোগ্রামগুলোতে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায়।কম্পিউটার ভাইরাস যেহেতু নিজে নিজে বংশবৃদ্ধি করতে পারে তাই যতক্ষণ পর্যন্ত না তার কোড পূর্ণ হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তা কম্পিউটারের ক্ষতি করতে পারে না। অর্থাৎ কম্পিউটার ভাইরাস ততক্ষণ ক্ষতিকর হয় যখন তার সিস্টেমের কনফিগারেশন এর সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করে। তবে সব ভাইরাস ক্ষতিকারক না


এন্টিভাইরাস কি‍‌ ?

প্রতিদিন সারাবিশ্বের বিভিন্ন অসাধু প্রোগ্রামদের দ্বারা নতুন নতুন ভাইরাস সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ভাইরাসের উপর গবেষণা করে এর প্রতিষেধক অর্থাৎ কম্পিউটার ভাইরাস ও তৈরি হচ্ছে। যেসব সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম ব্যবহার করে কম্পিউটারকে ক্ষতিকারক ভাইরাস প্রোগ্রামের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় কিংবা সংক্রমিত কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত করা হয় তাকে তাকে এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার বলে। কম্পিউটার প্রোগ্রামসমূহকে ভাইরাস মুক্ত করার জন্য বা ভাইরাস থেকে কম্পিউটার কে রক্ষা করার জন্য অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়।

 



‌ ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটারের লক্ষণসমূহঃ কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এর লক্ষণ বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। কখনও প্রোগ্রাম বা ডাটা ফাইল নষ্ট করে, কম্পিউটারকে বুট হতে বিরত রাখে। কখনও অনবরত অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ করে। তা ছাড়া নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা গেলে বুঝা যাবে কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।

(i) কম্পিউটার চালু হতে স্বাভাবিক-এর চেয়ে বেশি সময় লাগে।
(ii) কম্পিউটারের কাজের গতি কমে যায়।
(iii) প্রোগ্রাম লোড হতে বেশি সময় লাগে।
(iv) হার্ড ডিস্কের পার্টিশন নষ্ট করে ফেলে, ফলে সকল ডাটা হারিয়ে যায়। (v) হঠাৎ করে ফাইল উধাও হয়ে যায় অথবা নাম পরিবর্তিত হয়ে যায়।
(vi) ফাইলের কিছু অংশে অবাঞ্ছিত চিহ্ন বা বার্তা দেখা যায়।
(vii) প্রিন্ট করার ক্ষেত্রেও প্রিন্টারের গতি হ্রাস পায়।
(viii) তারিখ ও সময় অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। (ix) কাজের সময় অপ্রত্যাশিত কিছু ম্যাসেজ দেয় ও শব্দ হয়।
(x) হার্ড ডিস্কে ব্যাড সেক্টর দেখা যায়।
(xi) কাজের মাঝখানে হঠাৎ কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায়, কখনও শাটডাউন হয়ে যায়।
(xii) অনেক সময় কম্পিউটারের বায়াস-এর ডাটা মুছে কম্পিউটারকে অচল করে ফেলে।

কম্পিউটারে কোথায় কোথায় ভাইরাস অবস্থান করে‌ ?

(i) বাহিরের হার্ড ডিস্ক, ফ্লপি ডিস্ক, পেন ড্রাইভ, সিডি ও ডিভিডি বা অন্য কোন ডিস্কের মাধ্যমে ডাটা বা প্রোগ্রাম আদান-প্রদানের সময়
(ii) ইন্টারনেট ও ই-মেইলের মাধ্যমে।
(ii) নেটওয়ার্ক সিস্টেমের এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের অথবা সার্ভারের প্রোগ্রাম অথবা ডাটা আদান-প্রদানের মাধ্যমে।
(iv) পাইরেটেড বা কপি করা সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে।

কম্পিউটারে বিভিন্ন বিভিন্ন ভাইরাস নাম উল্লেখ করা হলোঃ

কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস পরিলক্ষিত হয়। তা ছাড়া প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ নতুন নতুন ভাইরাস তৈরি করছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ভাইরাসসমূহকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন-


(1) বুট সেক্টর ভাইরাস : বুট সেক্টর কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের একটি অংশ। কম্পিউটার চালু করার পর অপারেটিং সিস্টেম কীভাবে কাজ করবে, তা বুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে। এ জাতীয় ভাইরাস সরাসরি হার্ড ডিস্কের বুট সেক্টরকে নিজেদের কোড দ্বারা পরিবর্তন করে এবং অপারেটিং সিস্টেমের একটি অংশ হয়ে যায়। এগুলো প্রথমে মেমরিতে নিজেদের স্থাপন করে। এরপর বুট সেক্টরকে ডিস্কের অন্য স্থানে সরিয়ে রেখে নিজের কোড দিয়ে বুট সেক্টরকে প্রতিস্থাপন করে। এ জাতীয় ভাইরাস কম্পিউটারের বুটিং সিস্টেম ধ্বংস করে।

(ii) ফাইল ভাইরাস : ফাইল ভাইরাস এক্সিকিউটেবল প্রোগ্রাম ফাইলসমূহকে আক্রমণ করে COM এবং EXE এক্সটেনশনযুক্ত ফাইলসমূহকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত প্রোগ্রাম রান করলে প্রথমে ভাইরাস রান করে অরিজিনাল প্রোগ্রামকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরে প্রতিলিপি তৈরি করার জন্য এর কোডকে অন্য ফাইল বা ডিস্কে কপি করে। (iii) ট্রাজান হর্স ভাইরাস : গ্রিক পৌরাণিক ট্রজান ঘোড়ার নামানুসারে এ ভাইরাসের নামকরণ করা হয়। এটি আসলে খুবই মারাত্মক

ভাইরাস যদিও উপকারের মতো ভান করে। এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কোন প্রোগ্রাম চালু করলে কম্পিউটারে ডিস্ক বা ফাইল নষ্ট হতে পারে। আবার কখনও এ ভাইরাস সমগ্র হার্ড ডিস্ককে ফরমেট করে ফেলে।

(iv) কমান্ড পারপাস ভাইরাস : ফাইল I/O. SYS, MS-DOS.SYS ও IBM DOS.COM ফাইলসমূহ এ ভাইরাস দ্বারা নষ্ট করা হয়। বুটিং সিস্টেম চালু হওয়ার সময় এ ভাইরাস কম্পিউটারে ঢুকে বিশেষ ক্ষতি করে।

(v) জেনারেল পারপাস ভাইরাস : এ ভাইরাস বুট সেক্টর ও কমান্ড পারপাস ভাইরাসের ন্যায় গোপন পথে কম্পিউটারে প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতি করে, যা দূর করা সম্ভব হয় না।

(vi) প্রোগ্রাম ভাইরাস: প্রোগ্রাম ভাইরাস মূল প্রোগ্রামের কোন বিশেষ অংশকে নিজস্ব কোড দ্বারা প্রতিস্থাপিত করে এবং ভাইরাস মূল প্রোগ্রামের সাথে বাড়তি কিছু কোড যুক্ত করে প্রোগ্রামে স্থবিরতা এনে দেয়। এ জাতীয় ভাইরাস মেমরিতে স্থান করে নেয়।

(vii) ওভাররাইটিং ভাইরাসঃ এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ফাইলকে তার নিজস্ব কোড দ্বারা ওভাররাইট করে। ফলে এক সময় আক্রান্ত ফাইলটি অচল হয়ে পড়ে। এ জাতীয় ভাইরাস তেমন দ্রুত ছড়ায় না। প্রকৃতপক্ষে এ ভাইরাস তেমন বিপজ্জনক নয়। ফাইলকে আক্রমণ করে। এ ভাইরাস সাধারণ মাইক্রোসফট

(viii) ম্যাক্রো ভাইরাস: এটি একটি সাধারণ শ্রেণির ভাইরাস, যা ডাটা ওয়ার্ডের মতো অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের ম্যাক্রো ল্যাংগুয়েজে লেখা হয়। বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভাইরাস প্রায়ই দেখা যায়। ম্যাক্রো ভাইরাসই প্রথম ভাইরাস, যা ফাইলসমূহকে আক্রান্ত করে।

(ix) পার্টিশন সেক্টর ভাইরাস: পার্টিশন সেক্টর হল হার্ড ডিস্কের প্রথম সেক্টর। এটি ডিস্ক সম্পর্কিত তথ্য ধারণ করে। যেমন- প্রত্যেকটি পার্টিশন সেক্টর নম্বর। এখানে ডস পার্টিশন এবং ছোট প্রোগ্রাম শুরু হয়। কম্পিউটার চালু হয়ে পার্টিশন সেক্টর রিড করে এবং কোড নির্বাহ করে।
(x) স্টিলথ ভাইরাস: পার্টিশন ভাইরাসের একটি শ্রেণি বিশেষ। এ জাতীয় ভাইরাসগুলো নিজেদেরকে লুকিয়ে ফেলে। ফলে এদেরকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করা বেশ অসুবিধাজনক। এ ভাইরাস মূল ফাইলের একটি অংশ সরিয়ে সে স্থান দখল করে। কিন্তু ফাইলের প্রকৃত বাইট সংখ্যা বৃদ্ধি পায় না।

(xi) কম্পানিয়ন ভাইরাস: এ জাতীয় ভাইরাস কম্পিউটারের EXE এক্সটানশনযুক্ত ফাইলকে COM এরাটানশনযুক্ত ফাইলে রূপান্তরিত করে।

কম্পিউটার ভাইরাসের সংক্রমের মাধ্যমঃ বিভিন্নভাবে ভাইরাসের কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটার সংক্রান্ত হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমিত হয়। তাছাড়া ফ্লিপ ডিস্ক এর মাধ্যমে সাধারণত কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ায়।


তা নিচে একটি চিত্র অঙ্কন করা হলো?



কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধ করার উপায়ঃ

ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য দরকার শক্তিশালী এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম, যেমন- McAfee Antivirus, Antivirus Toolkit, Norton Antivirus, Dr. Solomon's Antivirus, PC-Cilin, AVG, Kaspersky ইত্যাদি। এদের মধ্যে একেকটি এন্টিভাইরাস একেকটি ভাইরাসের জন্য বেশি কার্যকরী। ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটারকে ভাইরাস নিধন করে পুনরায় কার্যোপযোগী করে তোলা যায়, কিন্তু তাতে করে মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট ছাড়াও অতি মূল্যবান প্রোগ্রাম বা তথ্য হারিয়েও যেতে পারে। তা ছাড়া প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাইরাস তৈরি হচ্ছে। তাই ভাইরাস নিয়সলের চেয়ে প্রতিরোধ করাই শ্রেয়। প্রতিরোধের জন্য কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

নিচে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলঃ

(i)কম্পিউটারের প্রতিটি ফাইল, ফোল্ডার নিয়মিত ভাইরাস স্ক্যান-এর মাধ্যমে স্ক্যান করা।

(ii) ব্যবহারের পূর্বে প্রতিটি ডিস্ক এন্টিভাইরাস এর মাধ্যমে স্ক্যান করা।

(iii) কম্পিউটারকে এমনভাবে ক্ষমতা দেয়া উচিত, যাতে প্রতিবার বুটিং-এর সময় নিজে থেকে এন্টি-ভাইরাস-এর মাধ্যমে হার্ড ডিস্ক স্ক্যান করতে পারে।

(iv) পাইরেটেড বা কপি করা সফটওয়্যার ব্যবহার না করা।
(v) ইন্টারনেটের ফাইল বা ই-মেইল গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।
(vi) একান্ত প্রয়োজন না হলে বাইরের কোন ফ্লপি ডিস্ক ব্যবহার না করা।
(vii) সবসময় এন্টিভাইরাস সফটওয়‍্যারের আপডেটেড ভার্সন ব্যবহার করা।
(viii) গেমস থেকে সাবধান থাকা। কারণ কম্পিউটার গেমসগুলো হল ভাইরাসের বড় ধরনের বাহক।
(ix) প্রতিদিন কাজের শেষে প্রয়োজনীয় ডাটার ব্যাকআপ রাখা।
(x) সকলকে ভাইরাস প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুডে ডিজি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

Related Post List in BlogPost